Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

ধুন্দুল গ্রীষ্মকালীন একটি নিরাপদ সবজি

ধুন্দুল
গ্রীষ্মকালীন একটি 
নিরাপদ সবজি
ড. বাহাউদ্দিন আহমেদ
ধুন্দুল কুমড়া গোত্রের অন্তর্ভুক্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি সবজি। পূর্বে এই সবজিটি শুধুমাত্র বসতবাড়িতে স্বল্প পরিসরে চাষ হতো কিন্তু বর্তমানে বাণিজ্যিকভাবে ব্যাপকভাবে চাষ হচ্ছে। শীতকালের কিছু সময় বাদ দিয়ে বাকি সারা বছরেই এই সবজি চাষ করা যায়। এই সবজির বিশেষ কিছু গুণের কারণে (যেমন- রোগ ও পোকামাকড়ের আক্রমণ তুলনামূলকভাবে কম এবং প্রতিকূল পরিবেশে টিকে থাকার ক্ষমতা বেশি) খুব সহজেই চাষ করা যায়। বর্তমানে সবজি চাষাবাদে কৃষকগণ বিভিন্ন ধরনের প্রাণঘাতী কীটনাশক ব্যবহার করে থাকেন। সে দৃষ্টিকোণ থেকে ধুন্দুলে কীটনাশক খুব কম ব্যবহার করলেই চলে। মাছি  পোকাকে যদি ফাঁদের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা যায় এবং ভালো মানের বীজ ব্যবহার করা হয় তবে শতভাগ নিরাপদ সবজি হিসাবে ধুন্দুলকে নিশ্চিত ভাবে বলা যায়। 
আমাদের দেশে এই সবজির ব্যবহার শুধুমাত্র সবজি হিসেবে, কিন্তু বিশ্বের অনেক দেশেই এর বহুবিধ ব্যবহার হচ্ছে। পরিপক্ব ধুন্দুলের স্পঞ্জকে শরীর পরিষ্কার থেকে শুরু করে বিভিন্ন জিনিস পরিষ্কারে ব্যবহার করা হয়। বর্তমানে জৈব পরিষ্কারক হিসেবে এই সবজির স্পঞ্জের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। চায়না ও কোরিয়াতে বিভিন্ন জৈব প্রসাধন সামগ্রী তৈরিতে এই সবজির ব্যাপক ব্যবহার হচ্ছে। এই সবজিতে বিভিন্ন পুষ্টি উৎপাদন পরিমাণে কম হলেও ভিটামিন বি-কমপ্লেক্স এর একটি ভালো উৎস এই সবজি। এই সবজিতে আঁশ বেশি থাকায় কৌষ্ঠকাঠিন্য দূরকরণে এই সবজি বেশ কার্যকর। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট হতে ধুন্দুলের দুটি মুক্ত পরাগায়িত উচ্চফলনশীল জাত (বারি ধুন্দুল-১ ও বারি ধুন্দুল-২) মুক্তায়িত হয়েছে এবং অতি শীঘ্রই হাইব্রিড ধুন্দুলের জাত মুক্তায়নের প্রক্রিয়া চলছে। উক্ত জাত দু’টি  কৃষক ভাইয়েরা প্রচলিত নিয়মে বীজ রাখতে পারবেন এবং পরবর্তী বছর তা ব্যবহার করতে পারবেন। 
বারি ধুন্দুল- ১ : আকর্ষণীয় সবুজ রঙের লম্বা আকৃতির (৩০-৩২ সেমি.) ফল। ইহার উপরের প্রান্ত ও নিচের প্রান্ত কিছুটা শরু। প্রতি ফলের গড় ওজন ২০০-২৩৫ গ্রাম। ফলে কোনরূপ তিক্ততা ভাব পরিলক্ষিত হয় না। পরাগয়নের পর হতে ৮-১০ দিন পর তা খাওয়ার উপযোগী হয়। গাছ প্রতি ফলের সংখ্যা ৯৫-১১০টি এবং ফল ধরা শুরু হওয়ার পর হতে প্রায় ৯০-১১০ দিন পর্যন্ত ফল ভালো ভাবে সংগ্রহ করা যায়। 
বারি ধুন্দুল- ২ : আকর্ষণীয় সবুজ রঙের, মাঝারি আকৃতির (১৮-২৫ সেমি.) ফল। প্রতি ফলের গড় ওজন ১৮৫ গ্রাম। ফলে কোনরূপ তিক্ততা ভাব পরিলক্ষিত হয় না। পরাগায়নের পর হতে ৮-১০ দিন পর তা খাওয়ার উপযোগী হয়। গাছ প্রতি ফলের সংখ্যা ১০০-১২৫টি এবং ফল ধরা শুরু হওয়ার পর হতে প্রায় ৮০-৯০ দিন পর্যন্ত ফল ভালো ভাবে সংগ্রহ করা যায়। গাছের উদ্ভিদতাত্ত্বিক বৃদ্ধি কম এবং ছাদ বাগানের জন্য খুবই উপযোগী।
বছরের যে কোন সময় ধুন্দুলের চাষ সম্ভব হলেও এদেশে প্রধানত খরিফ মৌসুমেই ধুন্দুলের চাষ করা হয়ে থাকে। ফেব্রুয়ারি হতে মে মাসের মধ্যে যে কোন সময় পর্যন্ত ধুন্দুলের বীজ বপন করা যায়। দীর্ঘ সময়ব্যাপী উষ্ণ ও আর্দ্র আবহাওয়ায় ধুন্দুল ভালো জন্মে। পরিবেশগতভাবে এটি একটি কষ্টসহিষ্ণু উদ্ভিদ। এরা খরা ও জলাবদ্ধতা সহ্য করতে পারে। অতিরিক্ত বৃষ্টিতে পরাগায়ন বিঘিœত হয় ফলে, ফলন কমে যায়। শীতকালের ২/৩ মাস ছাড়া বাংলাদেশে প্রায় সারা বছরেই ধুন্দুল চাষ করা সম্ভব। ধুন্দুলের জন্য হেক্টরপ্রতি ৩-৪ কেজি এবং শতাংশ প্রতি ১২-১৫ গ্রাম বীজের প্রয়োজন হয়।
বাণিজ্যিকভাবে ধুন্দুল চাষের জন্য উঁচু, পানি জমে থাকে না এমন জমি নির্বাচন করতে হবে। প্রথমে সম্পূর্ণ জমিকে ৪-৫ বার চাষ ও মই দিয়ে জমি উপযুক্ত করে নিতে হবে। সম্পূর্ণ জমিতে ১.২ মি. চওড়া ও ১০-১৫ সেমি. উঁচু করে বেড করে নিতে হবে। বেডের দৈর্ঘ্য জমির দৈর্ঘ্যরে উপর নির্ভর করবে এবং এক বেড হতে অন্য বেডের মাঝখানে কমপক্ষে ৬০ সেমি. এর নালা রাখতে হবে। এরপর বেডের মধ্যে ৩-৩.৫ মি. পরপর মাদা তৈরি করতে হবে। উক্ত মাদাতে সরাসরি ২/৩টি বীজ বপন করা যেতে পারে অথবা পলিব্যাগে চারা তৈরি করে       ১০-১৫ দিন বয়সের চারা মাদাতে লাগানো যেতে পারে। 
সারের পরিমাণ ও প্রয়োগ পদ্ধতি : ধুন্দুলের জমিতে শতাংশ প্রতি সার প্রয়োগ সারণি দ্রষ্টব্য। মাদায় চারা রোপণের পূর্বে, সার দেয়ার পর পানি দিয়ে মাদার মাটি ভালভাবে ভিজিয়ে দিতে হবে। অতঃপর মাটিতে ‘জো’ এলে ৭-১০ দিন পর চারা রোপণ করতে হবে। 
পরবর্তী পরিচর্যা : ধুন্দুল গ্রীষ্মকালে চাষ করা হয়। গ্রীষ্মকালে মাঝে মাঝে বৃষ্টি হয় বলে তখন সবসময় পানি সেচের প্রয়োজন নাও হতে পারে। কিন্তু ফেব্রুয়ারির শেষ সময় থেকে মে মাস পর্যন্ত খুব শুষ্ক আবহাওয়া বিরাজ করে। তখন অনেক সময় কোন বৃষ্টিই থাকে না। উক্ত সময়ে ৫-৬ দিন অন্তর নিয়মিত পানি সেচের প্রয়োজন হয়। ধুন্দুলের কাক্সিক্ষত ফলন পেতে হলে অবশ্যই মাচায় বা কঞ্চিতে চাষ করতে হবে। ধুন্দুল কঞ্চিতে/মাচায় চাষ করলে প্রাকৃতিক পরাগায়ন বেশি হওয়ায় ফলন ভাল হয়। সেচের পর জমিতে চটা বাঁধে। চটা বাঁধলে গাছের শিকড়াঞ্চলে বাতাস চলাচল ব্যাহত হয়। কাজেই প্রত্যেক সেচের পর হালকা মালচ করে গাছের গোড়ার মাটির চটা ভেঙে দিতে হবে। চারা লাগানো থেকে শুরু করে ফল সংগ্রহ পর্যন্ত জমি সবসময়ই আগাছা মুক্ত রাখতে হবে। এ ছাড়াও  গাছের গোড়ায় আগাছা থাকলে তা খাদ্যোপাদন ও রস শোষণ করে নেয়। ফলে কাক্সিক্ষত ফলন পাওয়া যায় না। চারা রোপণের পর গাছ প্রতি সারের উপরিপ্রয়োগের যে মাত্রা উল্লেখ করা আছে তা প্রয়োগ করতে হবে। সময়মতো গাছের গোড়ায় শোষক শাখা অপসারণ করলে ফলন বৃদ্ধি পাবে। ভালো ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে পারলে ৪-৬ মাসব্যাপী ফল সংগ্রহ করা যায়। ধ্ন্দুুলের ফল পরাগায়নের ৮-১০ দিন পর সংগ্রহের উপযোগী হয়।
রোগবালাই ও পোকামাকড় ব্যবস্থাপনা  
পাউডারি মিলডিউ : পাতার উভয় পাশে প্রথমে সাদা পাউডার বা গুঁড়া দেখা যায়। ধীরে ধীরে এ দাগগুলো বড় ও বাদামি হয়ে শুকিয়ে যায় কোন একটি লতার পাতায় আক্রমণ বেশি হলে ধীরে ধীরে সেই লতা ও পরে পুরো  গাছই মরে যেতে পারে। আগাম চাষ করে রোগের প্রকোপ কমানো যায়। প্রতি ১০ লিটার পানিতে ২০ গ্রাম থিওভিট বা সালফোলাক্স/ কুমুলাস অথবা ১০ গ্রাম ক্যালিক্সিন ১৫ দিন পর পর স্প্রে করে এ রোগ নিয়ন্ত্রণ করা।
ডাউনি মিলডিও : এটি ধুন্দলের একটি ছত্রাকজনিত রোগ। এ রোগের ফলে পাতার নিচের পৃষ্ঠে হলুদ দাগ দেখা যায়। আক্রমণ তীব্র হলে দাগগুলো আস্তে আস্তে বড় হতে থাকে। এ রোগ দমনের জন্য অটোস্টিন অথবা ইনডোফিল  ১গ্রাম/প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে ৫-৭ দিন পর পর ২/৩ বার স্প্রে করে এই রোগ সহজেই নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
ফলের মাছি পোকা : স্ত্রী মাছি কচি ফলে ডিম পাড়ে। ডিম ফুটে কীড়াগুলো ফলের শাস খায়, ফল পচে যায় এবং অকালে ঝরে পড়ে। পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন চাষাবাদ, আক্রান্ত অংশ সংগ্রহ করে ধ্বংস করতে হবে। সেক্স ফেরোমন ও বিষটোপ ফাঁদের যৌথ ব্যবহার করতে হবে। বিষটোপের জন্য থেঁতলানো ১০০ গ্রাম পাকা মিষ্টিকুমড়ার সাথে ০.২৫  গ্রাম সেভিন ৮৫ পাউডার মিশিয়ে ব্যবহার করতে হয়। বিষটোপ ৩-৪ দিন পরপর পরিবর্তন করতে হয়।
পামকিন বিটল : পূর্ণাঙ্গ পোকা চারা গাছের পাতা খায়। কীড়া গাছের গোড়ায় মাটিতে বাস করে এবং গাছের শিকড়ের ক্ষতি করে, বড় গাছ মেরে ফেলতে পারে। প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম সেভিন/কার্বারিন ৮৫ ডব্লিউপি মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে। কীড়া দমনের জন্য প্রতি গাছের গোড়ায় ২-৫ গ্রাম বাসুডিন/ডায়াজিনন-১০ জি মিশিয়ে সেচ দিতে হবে।

ফলন :  উপরোক্ত নিয়ম মেনে চাষ করলে বিঘাপ্রতি ৬.৫ টন (শতাংশ প্রতি ১৯৭ কেজি) পর্যন্ত ফলন পাওয়া যেতে পারে।

লেখক : উর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, সবজি বিভাগ, উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্র, বারি, জয়দেবপুর, গাজীপুর, মোবাইল : ০১৫৫৬৩৬৩৯০১;            ই-মেইল : নধযধঁফফরহধযঢ়হবফ৫৭@ুধযড়ড়.পড়স


COVID19 Movement Pass Online Police Clearance BD Police Help line Expatriate Cell Opinion or Complaint NIS Bangladesh Police Hot Line Number Right to Information PIMS Police Cyber Support for Women BPWN Annual Training Workshop Achievement & Success PHQ Invitation Card
Press Release Recruitment Information Procurement / Tender Notice Legal Instrument Innovation Corner Detective Magazine Bangladesh Football Club Diabetes-Covid19 Exam Results Accident Info Important Forms

Apps

icon icon icon icon icon icon